নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে তলবের মুখে পড়তে চলেছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে তদন্তের এই পর্যায়ে ব্রাত্য বসুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
তৃণমূল সরকারের প্রথম পর্বেও শিক্ষা মন্ত্রী ছিলেন ব্রাত্য বসু। পরে তাঁকে সরিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তৃতীয়বার সরকার আসার পরে ফের শিক্ষা মন্ত্রী হন ব্রাত্য বসু। প্রাথমিকে নিয়োগ থেকে এসএসসি নিয়োগের তদন্তে একাধিকবার তাঁর প্রসঙ্গ চলে এসেছে তদন্তের গতিপথে, দাবি সিবিআই’র।
অবৈধ প্রার্থীদের জন্য শূন্যপদ সৃষ্টি সংক্রান্ত মামলায় শুক্রবারই কলকাতা হাইকোর্টে শুনানিতে বারেবারে এসেছিল ব্রাত্য বসুর প্রসঙ্গ। এই মামলায় বিচারপতি শিক্ষা সচিব মণীশ জৈনকে তলব করেছিলেন। শুনানি চলাকালীন এজলাসে বিচারপতি তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, স্কুলে চাকরির ক্ষেত্রে অযোগ্য প্রার্থীদের পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত কীভাবে হয়েছে? শিক্ষা সচিব জানান, উপযুক্ত স্তর থেকেই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিক্ষা সচিব জানিয়ে দেন, এব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুই তাঁকে জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত রাজ্য মন্ত্রীসভার।
আদালত তখনই মন্ত্রীসভার সিদ্ধান্তের ‘নোট’ দেখতে চান। এরপরে কয়েকটি সাংবাদমাধ্যমে আবার ব্রাত্য বসু প্রতিক্রিয়া দিয়ে বলেছিলেন, শূন্যপদ পূরণ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য মন্ত্রীসভাই। সেই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে শিক্ষাসচিব মণীশ জৈনকে আইনি পরামর্শ নিতে বলা হয়েছিল।
বেনজিরভাবে অযোগ্য, অবৈধদের নিয়োগের পরিককল্পনা, সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য মন্ত্রীসভাই, বিস্মিত বিচারপতিও। সেই প্রক্রিয়াতেও চলে এসেছে ব্রাত্য বসুর প্রসঙ্গ। কয়েক বছর আগে দমদমে শাসক তৃণমূলের প্রকাশ্য সভাতেই ব্রাত্য বসুকে বলতে শোনা গিয়েছিল স্কুলের চাকরি তৃণমূলের লোকেরাই পাবে। কীভাবে পাবে, কেন পাবে সে আমি বলব না কিন্তু চাকরি যা পাবে সব তৃণমূলের কর্মীরাই পাবে। কার্যত প্রাইমারিতে নিয়োগের দুর্নীতিকেই সরাসরি বৈধতা দিয়েছিলেন খোদ মন্ত্রী নিজেই। এবার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ দুর্নীতির গোটা কাণ্ডে ব্রাত্য বসুর ভূমিকা খতিয়ে দেখতে তাঁকে জেরা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে সিবিআই।
এদিকে আদালতের ভর্ৎসনার পরেই আরও নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে আরও গতি বাড়িয়েছে সিবিআই। শনিবার নিজাম প্যালেসে প্রায় ৪০ জন চাকরিপ্রার্থী ও অবৈধভাবে চাকরি পাওয়া ব্যক্তিদের জেরা করেছে সিবিআই। এর আগে গত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তদন্তের গতি প্রকৃতি উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন হাইকোর্টে বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলি। কেন এত ধীর গতিতে সিবিআই তদন্ত করছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। নিয়োগ দুর্নীতিতে জনের ওএমআর শিটে নম্বর বদল করা হয়েছে বলে অভিযোগ। তাদের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজনকে কেবল জেরা করেছিল সিবিআই। এরপরেই এদিন ওএমআর শিটে নম্বর বদল হওয়া একাধিকজনকে জেরা করে সিবিআই। মোট ৪০ জনকে নিজাম প্যালেসে এদিন সকাল থেকেই একের পর এক জেরা শুরু করেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকরা। প্রত্যেকের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে।
Comments :0